শিশুর মাসিক বৃদ্ধি

নয় থেকে বারো মাস বয়সেই অধিকাংশ শিশু তাদের প্রথম দিয়ে হাটা শুরু করে আর চোদ্দ, পনের মাস বয়সে তারা বেশ ভালোই হাটতে শিখে যায়। আপনার শিশু যদি কফি টেবিল অথবা অন্য কিছুর সাপোর্ট নেয় তাহলেও চিন্তিত হবেন না। শিশুর ১৫ অথবা ১৬ মাস বয়সে অথবা তারও বেশী বয়সে প্রথম পায়ে হাটা শুরু করাটাও স্বাভাবিক বলেই মনে করা হয়। আপনার শিশুকে হামাগুড়ি ও হাটতে উৎসাহ দিন, তাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার অনেক সুযোগ তৈরি করে দিন আর তাকে বেশী কোলে না রেখে নিজে নিজে চলার তারও করতে দিন। আপনার শিশু হাটতে শুরু করলে তাকে উৎসাহিত করতে আপনার ঘরের আসবাব গুলোকে তার হাটার পথে সারিবদ্ধ করে সাজিয়ে দিতে পারেন যাতে সে নিরাপদ একটা কিছু ধরে হাটা শিখতে পারে। বিপদজনক কোন কিছু থাকলে সেগুলো সরিয়ে ফেলুন যেগুলো সে ধরতে পারে , যেমন, ঝুলানো টেবিল ক্লথ অথবা বৈদ্যুতিক তার। আপনার শিশু যদি টলতে টলতে হাটে, সে আপনার আঙ্গুল ধরে হাটতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে, অথবা সে যদি তার হাতগুলো শুন্যে তুলে রাথে তাহলে তার হাত ধরে আপনি তার পেছন পেছন হাটতে পারেন। শুধুমাত্র নিশ্চত হয়ে নিন এটা আপনার শিশুর জন্য নিরাপদ আর এটা যথেষ্ট প্রশস্থ।

 

আপনার ১৩ মাস বয়সী শিশুর পরিবর্তিত খাবার অভ্যাস

আপনার শিশুর খাবারের রুচি হাঠাৎ কমে গেলে আবাক হবেন না। এ বয়সী শিশুরা খাবার কমিয়ে দেয় আর হঠাৎ করেই আবার অনেক বেশী খাবার খাওয়াটা স্বাভাবিক আচরণ হিসেবেই দেখা হয়। পরিবর্তনটা মনে হতে পারে অদ্ভুত কারণ সে এখন অনেক বেশী প্রাণবন্ত। কিন্তু এখন তার বৃদ্ধির গতি অনেকটা ধীর। এখন খুব খাবারের  প্রয়োজন তার নেই। আপনার শিশুকে বেশী খাবার খেতে জোর করবেন না। তার বদলে তাকেই ঠিক করতে দিন তার কতটা খাবার দরকার।

 

সে কি পরিমাণ খাবার খাবে তা আপনি নির্ধারণ করতে পারছেন না কিন্তু প্রত্যেক মিলের সময়ই বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যকর খাবার তার সামনে নিয়ে আসুন। মিষ্ঠি ও অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবার তাকে খেতে দিবেন না। যতক্ষণ তাকে প্রাণবন্ত দেখাচ্ছে তার স্বাস্থ্য ঠিক থাকার সম্ভাবনাই বেশী। যদি আপনার মনে কোন সন্দেহ  থাকে তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।

 

স্বপ্ন দেখা শুরু:

 

১২ থেকে ১৪ মাসের মধ্যে শিশুরা স্বপ্ন দেখা শুরু করে আর কোন স্বপ্ন আপনার শিশুকে হঠাৎ করে জাগিয়ে তুলতে পারে। প্রতিদিনের রুটিন ফলো করার মাধ্যমে আর ঘুমের আগের সময়টা আপনার শিশুকে অনেক ভালোবাসা দিয়ে আপনি তার সুন্দর ঘুম নিশ্চিত করতে পারেন।

 

মা-বাবার জন্যে টিপস

 

আমার শিশু চিৎকার করার মধ্যে তার আনন্দ খুজে পেয়েছে। সে রাগ করে নি শুধুমাত্র তার কণ্ঠস্বরের আওয়াজটা পরীক্ষা করছে- কিন্তু এটা বড়দের কানের জন্য খুব অস্বস্তিকর। আমি তাকে থামানোর জন্য যা করি তা হল গান গাওয়া। খুব জোরে না, কিন্তু  সে যেন শুনতে পায় তেমন জোরে। এটা সাধারণত তার মনোযোগ আকর্ষণ করে আর সে চিৎকার থামিয়ে দেয়।

 

আপনার ১৪ মাস বয়সী শিশু

 

আপনার শিশুকে ফলমূল ও পানি খেতে উৎসাহিত করুণ (ফলের জুস খাওয়ার পরিবর্তে)। আপনার শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে যদি কোন সন্দেহ মনে আসে তাহলে তার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। তিনি আপনার শিশুর উচ্চতা ও ওজনের হিসাব দেখে নিশ্চিত হবেন তার বৃদ্ধি স্বাভাবিক কিনা।

ডাক্তার যদি মনে করেন আপনার শিশুর ওজন স্বাভাবিক থেকে বেশী তাহলে তিনি হয়তো কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খেতে পরামর্শ দিবেন। আপনার শিশুকে বোতল, দুধ, জুস নিয়ে সারক্ষণ ঘুরতে দিবেন না। আপনার শিশুকে যদি জুস খেতে দেন তাহলে সেটা ৪ থেকে ৬ আউন্সের মধ্যে সীমবদ্ধ রাখুন। (আপনি জুসের সাথে বেশী করে পানি মিশিয়ে এর পরিমান  প্রয়োজন মতো বাড়িয়ে নিতে পারেন।)

 

যখনই সম্ভব হবে তখনই তাকে নিজে থেকে খাবার খেতে দিন চামচ দিয়ে খাওয়ানোর পরিবর্তে। হাতে খাবার খাওয়ার মাধ্যমে সে বুঝতে শিখবে কখন তার ক্ষুধা লেগেছে আর কখন তার পেট ভরে গেছে। আপনার শিশুর স্বাভাবিক খাবার কমিয়ে দিবেন না, যদি না তার ডাক্তার কম খাবার দিতে বলে- সে হয়ত তার শরীরের চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে।

 

প্রথম জন্মদিনের পর বুকের দুধ খাওয়ানো

 

আপনার শিশু যদি বুকের দুধ খেতে থাকে। সেজন্য আপনাকে অভিনন্দন। প্রথম বছর পার হবার পর সব শিশু বুকের দুধ খেতে চায় না। যা শিশুর জন্য অনেক উপকারী। যদিও আপনার শিশু এখন তার বেশীর ভাগ পুষ্টি  শক্ত খাবার থেকে পাচ্ছে তারপরও বুকের দুধ তাকে প্রয়োজনীয় ক্যালরি, ভিটামিন, এবং মূল্যবান খনিজপদার্থ প্রদান করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সব শিশুরা বুকের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে তারা তুলনামৃলক কম অসুস্থ্য হয়।

 

আপনার ১৫ মাস বয়সী শিশু- বইয়ের জগতে প্রবেশ

 

আপনার শিশু বই ভালোবাসতে পারে। সে হয়ত বুকশেল্প থেকে বই টেনে নামাবে। বই কামড়াবে, এগুলো জড় করবে, অথবা বইয়ের পাতা উল্টাবে। অথবা সে শান্ত, খুশী মনে আপনার সাথে বসে বইয়ের ছবি দেখবে। এই বয়সে অনেক শিশু বসতে পারে আর অন্যরা পারেনা তাই আপনার শিশু বসতে না পারলে হাল ছেড়ে দেবেন না।

চেষ্টা চালিয়ে যেত থাকুন। আপনার শিশুকে বইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকুন আর একসময় তার বই ভালো লেগে যাবে এবং সে বসে বই থেকে গল্প শুনতে ভালোবাসবে। দীর্ঘ সময় পর মনে হবে আপনাদের দুই জনের বই  পড়ে কাটানো সময়টা ছিল সবচেয়ে আকর্ষনীয়। শিশুদের গল্প পড়ে শোনালে তারা অনেক নতুন শব্দ শুনতে পারে এবং তারা গল্প বলার ও শোনার অনন্দটাও উপভোগ করতে পারে। এটা তাদের চার পাশের জগৎটা কেমন তা শেখায় আর শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ তৈরী করে।

 

ভয়ঙ্কর শব্দ (ভয় পাওয়া শব্দ)

 

উচ্চ শব্দ থেকে ভয় পাওয়ার ঘটনা কখনো অপ্রত্যাশিত ভাবেই সামনে চলে আসে। আপনার ১৬ মাস বয়সী শিশু ভেকুয়াম ক্লিনার, বজ্রপাত, সাইরেন, আতশবাজী, অথবা কাটার শব্দ শুনে ভয় জড়সড় হয়ে কান্না করতে পারে আর এসব শব্দ তাকে আতঙ্কিত করতে পারে।তাকে শান্ত করুণ। জড়িয়ে ধরে তার ভয়ের কারণ বোঝার চেষ্টা করা এবং সেটা নিয়ে কিছু কথা তাকে বলাটাই অধিকাংশ সময়ে যথেষ্ট। আপনার শিশুকে দেখান কিভাবে সে তার হাত দিয়ে কান বন্ধ করে ভয় পাওয়া শব্দ কম করতে পারে। আপনার শিশুর ভয় ধীরে ধীরে কেটে যাবে, যখন সে বুঝতে শিখবে শব্দগুলো কোথা খেকেআসছে আর এগুলো কোন ক্ষতি করেনা।