কানের ইনফেকশন শুরুতেই চেনার পাঁচটি লক্ষণ

যখন আপনি একজন মা তখন আপনার বাচ্চার ভালো মন্দের দায়িত্ব আপনাকেই বুঝে নিতে হবে। বাচ্চার ছোটখাটো শারীরিক মানসিক সব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ ও তার প্রতিকার  এমনকি প্রতিরোধ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রাখা একজন সতেচন মা হিসেবে আপনার প্রথম কর্তব্য বা দায়িত্বর মধ্যে পরে।

বাচ্চাদের শারীরিক সমস্যা বা রোগের মধ্যে কানের ইনফেকশন অন্যতম একটি ভয়াবহ সমস্যা। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল শিশুদের কানের সমস্যা অন্যান্য সাধারণ রোগের থেকে কম হয়ে থাকে বলে আমরা বাবা মায়েরা এটিতে খুব একটা নজর দেইনা আর এটাকে নিতান্তই মামুলী ব্যাপার বলে গুরুত্ব কম দিয়ে থাকি। আপনি জানেন কি কানের ইনফেকশন আপনার বাচ্চার জন্য মোটেও সাধারণ কোন ব্যাপার নয়। কানের ইনফেকশন থেকে আপনার বাচ্চা সারা জীবনের মতো বধির হয়ে যেতে পারে।

আসুন এই আর্টিকেল মাধ্যমে জানাবো কি আপনি শুরুতেই আপনার বাচ্চার কানের ইনফেকশন চিনতে পারবেন।

যে পাঁচটি লক্ষণ দেখে শুরুতেই বাচ্চার কানের ইনফেকশন চিহ্নিত করবেনঃ

১। বাচ্চার অতিরিক্ত কান্নাকাটি করাঃ

আপনার বাচ্চা কখন অতিরিক্ত কান্নাকাটি করছে সেটা তো আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন। যদি দেখেন বাচ্চা অকারণে কান্নাকাটি করেই যাচ্ছে বা অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশী সময় ধরে কাঁদছে তাহলে মনে রাখুন এটি আপনার বাচ্চার কানে ইনফেকশনের একটি লক্ষণ। এভাবে বাচ্চা কান্না করতে থাকলে অবহেলা না করে তার দিকে মনোযোগ দিন বাচ্চাকে কাছে নিয়ে ভালোভাবে দেখুন তার কানে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন কিনা। প্রয়োজনে বাচ্চাকে নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

২। বাচ্চার কানে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়াঃ

বলেছি বাচ্চার কানে ইনফেকশন হওয়ার অন্যতম লক্ষণ হল অতিরিক্ত কান্নাকাটি করা আর এই অতিরিক্ত কান্নাকাটিবাচ্চার কানের ব্যথা থেকেও হতে পারে। বাচ্চার কানে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া হল কানে ইনফেকশনের আরও একটি মেজর লক্ষণ। অনেক বাবা মা কিন্তু বাচ্চাদের এসব লক্ষণগুলো স্বাভাবিক আর সাধারণভাবে নিয়ে থাকেন যার ফলাফল দ্বারায় বাচ্চার দীর্ঘমেয়াদী কানের সমস্যা আবার কোন কোন সময় শ্রবণশক্তি নষ্টের কারন।

এমন লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে বাচ্চা একবার ডাক্তারের কাছ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসুন। যদি সত্যি কানে ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে প্রাথমিক পর্যায়েই ট্রিটমেন্ট পাবে।

৩। বাচ্চা ঠিকঠাক ঘুমাতে পারবেনাঃ

কানে ইনফেকশন চিহ্নিত করার আরও একটি লক্ষণ বাচ্চা দিনে রাতে কখনোই ঠিক করে ঘুমাতে পারবেনা। কারনকানে ইনফেকশন হলে বাচ্চা শুয়ে থাকলে কানে ব্যথাও বেড়ে যাবে এমনকি শোবার কারনে কানে চাপ পরাই বাচ্চা ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জেগে উঠবে। 

বাচ্চা কখন ঘুমা কতটুকু ঘুমা এইগুলো প্রতিটা মায়ের নখদর্পণে থাকে, তাই যদি এসব কিছুতে অনিয়ম দেখেন আর বাচ্চাকে ঘুমাতে কষ্ট পেতে দেখেন তাহলে ধরে নিতেই পারেন আপনার বাচ্চা কানের ইনফেকশনের স্বীকার হয়েছে।

৪। বাচ্চার কান দিয়ে তরল বের হওয়াঃ

আপনার সোনামণির কানে ইনফেকশন হচ্ছে কিনা সেটা বোঝার আরও সহজ উপায় হল বাচ্চার কান থেকে তরল কিছু বের হচ্ছে কিনা সেটা লক্ষ্য করা। ম্যাক্সিমাম বাচ্চার কানে ইনফেকশনের ক্ষেত্রে কান থেকে হলুদ বা সাদা জাতীয় তরল বের হবে। যদি দেখেন আপনার বাচ্চার কান দিয়ে এই ধরণের তরল কিছু বের হচ্ছে তাহলে দেরি করবেন না। ভালো একজন ডাক্তারের কাছে বাচ্চাকে নিয়ে যান।

৫। ঠাণ্ডা কাশি ও শ্বাসনালীতে প্রদাহঃ 

বাচ্চার অতিরিক্ত ঠাণ্ডা কাশির সমস্যা ও শ্বাসনালীতে প্রদাহ এগুলো কানে ইনফেকশনের ওয়ার্নিং সাইন। আপনার বাচ্চার খুব বেশী ঠাণ্ডা কাশি নিয়ে ভোগা সাধারণ মামুলী সমস্যা বলে সব সময় এরিয়ে যাবেন না। বরং একটু বাড়তি মনোযোগ দিন।

বাচ্চার সঠিক যত্ন ও সুরক্ষার দায়িত্ব আপনার, তাই সকল প্রকার সমস্যা হোক সেটা সামান্য সেই সামান্য সমস্যাও আপনাকে ভীষণ দায়িত্বে করতে হবে।

আসুন এবার কিভাবে বাচ্চার কানের ইনফেকশন কিছুটা হলেও রোধ করা যাই সে সম্পর্কে জানিঃ

* হাত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। কোন রোগ জীবাণু যেন হাতে লেগে না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গরে তুলুন। ঠাণ্ডা বা ফ্লুর জীবাণু হাত থেকেই স্থানান্তরিত হয় তাই ঠিকঠাক হাত ধোয়া কানের ইনফেকশন প্রতিরোধের অন্যতম সহজ উপায়।

* সিগারেটের ধোয়া থেকে আপনার বাচ্চাকে যতোটা সম্ভব দূরে রাখুন। গবেষণায় দেখা গেছে সিগারেটের ধোয়া বাচ্চার কানের ইনফেকশনের অন্যতম কারন।

* অতিরিক্ত শব্দপ্রবণ এরিয়াতে আপনার বাচ্চাকে নিয়ে যাবেন না আর সবার আগে নিশ্চিত করুন আপনার বাচ্চাকে যেখানে বেড়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ যেন উচ্চ শব্দপ্রবণ না হয়। বাচ্চার কানের ইনফেকশনের এটাও অন্যতম কারন।

* আপনার ছোট্ট সোনামণিকে একদম চিৎ করে শুইয়ে দুধ বা অন্য কোন তরল জাতীয় খাবার খাওয়াবেন না। এটি কানে ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেই। এমনকি ঘুমন্ত অবস্থায় বাচ্চাকে শুইয়ে দুধ খাওয়ালে তা নাক দিয়ে কানে ধুকে ইনফেকশন হতে পারে।

৬ মাসের কম বয়সী শিশুরা প্রায়শই কানের ইনফেকশন ও কানে ব্যথার কারনে জ্বরে ভুগে থাকে। আপনার বাচ্চার যদি ১০২ ডিগ্রি বা তারচেয়ে বেশী জ্বর হয়েই থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। আর কান জনিত সমস্যায় কোন হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে চেষ্টা করবেন বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করার অথবা চিকিৎসা নেওয়ার।

আমাদের কল সেন্টারে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০

লিখেছেনঃ রুমানা রহমান