কেন কিছু মায়েরা সন্তান আর ক্যারিয়ার দুটিকেই ব্যালান্স করতে পারেন।

ছুটিটা শেষ হয়ে আসছে। মন খারাপ হয় প্রচন্ড এমন সময়ে। যদি যার কর্মজীবনের দিকে ছুটতে হচ্ছে তার নবজাতককে ঘরে রেখে বেরুতে হয়! তার জন্য এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। কারণ এটা শুধু তার ক্যারিয়ারের ব্যপার নয়। ইমোশনাল, সোশ্যাল নানা রকম ব্যাপার জড়িত এখানে যখন একজন মা শিশুকে রেখে বাইরে যান। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর যে যুদ্ধ শুরু করেন তিনি সারাজীবন এই যুদ্ধ চালাতে হয় তার। এটা একমাত্র যিনি করেন তিনিই বুঝতে পারেন কত ধরণের প্রতিবন্ধকতাসহ পথ চলতে হয় কর্মজীবি নারীকে।

কর্মজীবি নারীরা যেহেতু আত্মনির্ভরশীল হয়ে থাকে তাই তাঁদের সন্তানও ছোটবেলা থেকেই স্বনির্ভর হতে শেখে এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সারাদিন সন্তানের পিছনে এটা ওটা নিয়ে লেগে থাকলেই সন্তান খুব ভালো করবে সব ক্ষেত্রে এমন নয়। আর সন্তান পালন এই কাজটা শুধু মায়ের তাও কিন্তু নয়। বাবা বা পরিবারের অন্যান্যদের সংস্পর্শও খুব জরুরী একজন শিশুর জন্য। তবে মায়ের দ্বারাই সন্তান বেশী প্রভাবিত হয়। তাই মা যদি নিজের জীবনে স্বাধীন এবং কর্মময় হয়ে থাকেন তার সন্তানও সেই শিক্ষা নিয়েই বড় হয়। তবে যেমনটি প্রথমেই বললাম, এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। বাচ্চা আর ক্যারিয়ার দুটোই ঠিক রাখা। তারপরও কিছু নারী পারছেন ব্যালান্সটা করতে। কীভাবে করেন তারা ব্যালান্স?

 

পরিকল্পনা

কর্মজীবি নারীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কীভাবে তিনি সন্তান কাজ দুটো এক সঙ্গে সামলাবেন। এজন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা সবচেয়ে জরুরী। বাইরে থাকার সময় সন্তান কার কাছে থাকবে, স্কুলে কে নিয়ে যাবে, কখন তাকে খাওয়ানো হবে এসব তখনই ঠিকঠাক হবে যখন একটি সুন্দর পরিকল্পনা থাকবে। যেকোনো কাজের আগেই পরিকল্পনাটা ঠিক মতো করে ফেললে সেই মায়ের বাড়তি ধকল পোহাতে হয় না।

পরিবারের সাথে আলোচনা

সন্তানের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে এবং পারিবারিক বা সামাজিক চাপ মোকাবেলা করতে পরিবারের চাথে আলোচনার বিকল্প নেই। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া কর্মজীবি মায়ের পখে সন্তান আর ক্যারিয়ার কোনোটাই সামলানো মুশকিল। তাই পরিবারের সাথে আলোচনা করে কোন ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ নিতে হবে সেটা ঠিক করতে হবে। একা একা কোনো সিধান্ত নিলে সেটা পরিবারের অন্যদের অজানা থাকলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরিবারের সবাই বিশেষ করে স্বামীকে সব সময় সব বিষয়ে আপডেট রাখা উচিত হবে। হতে পারে অফিসের কাজে কোথাও বেশী সময়ের জন্য বাইরে যেতে হবে, এটা পরিবারের কাউকে না জানালে সন্তানের দেখভালের বিষয়টা ঝুলে যেতে পারে। যখন মা বাইরে আছে তখন সন্তানের পাশে বেশী সময় যেন বাবা থাকতে পারে সেটা আগেই তাকে জানিয়ে দিলে ভালো।

কর্মক্ষেত্রে আলোচনা

কর্মক্ষেত্রে সব সময় সন্তানের অজুহাত দেখিয়ে সুবিধা গ্রহণ যেমন ঠিক না তেমনি বাচ্চার যেকোনো অসুবিধায় যেন তার পাশে থাকা যায় সেজন্য আলোচনার মাধ্যমে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে নিতে হবে। অফিসে অহেতুক ছুটিছাটা না নিয়ে ছুটি জমাতে হবে, যেন শিশুর কোনো অসুস্থতায় হুট করে ছুটি নেয়া যায়। বাচ্চাদের অসুস্থ তো আর বলে কয়ে আসে না। সেটার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। ইমারজেন্সি কিছু হলে যেন অফিস থেকে ছাড়া পাওয়া যায় এটা অফিসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে আলোচনা করে রাখতে হবে।

মনোবল

কর্মজীবি মাকে একটা ব্যাপার সব সময় মনে রাখতে হবে যে মানসিক শক্তি দিয়েই এই কঠিন যুদ্ধে জয়ী হতে হবে। যদি মানসিক ভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে কোনো মা তাকে শুধু পিছিয়েই যেতে হয়। কারণ মনোবল না থাকলে আগের অর্জিত সব ধ্বসে পড়তে থাকে একে একে। নিজেকে নিয়েও সন্দিহান হয়ে উঠতে থাকেন সেই মা। নিজেকে অপরাধী ভাবতে থাকেন কারণ তার সন্তানের সাথে তিনি সারাদিন থাকছেন না। এটা কর্মক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে থাকে। তাই মনোবল রাখতে হবে। মন রাখতে হবে একজন সফল মায়ের সন্তান তার জীবনেও সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয় বেশী। মাকে দূর্বল দেখলে সন্তান মানসিক ভাবে অশান্তিতে ভুগতে পারে।

পরিশ্রম

যেকোনো কাজই পরিশ্রমসাধ্য। সন্তান পালন করা আর বাইরের কাজ দুটোই অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে যথাযথ ভাবে করা সম্ভব। এটা ভাবার সূযোগ নেই বাচ্চা আছে বলে অফিসে কম কাজ দেবে বস, বা অফিসে যাওয়া হয় বলে ঘরের যে সব দায়িত্ব আছে সেগুলো অন্য কেউ পালন করে দেবে। তাই পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকা চাই। আর সেটা থাকে বলেই অনেক কর্মজীবি মা কর্মক্ষেত্রে এবং সন্তানের কাছে খুব প্রিয় হয়ে থাকেন।

তবে শ্রম দিতে চাইলে তো এনার্জিও লাগবে। তবে ছোট বাচ্চার মায়েদের জন্য এই এনার্জি ম্যানেজ করা একটু বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, প্রতিরাতে বার বার ঘুম থেকে উঠে বাচ্চার প্রস্রাবের কাঁথা আর জামা চেঞ্জ করার ধকল। তবে এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু বাচ্চার জন্য হাই এবসরবেন্ট ডায়াপার ব্যবহার করতে পারেন, যা বেবির আর আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবেনা।

সন্তানের সাথে আলাদা সময়

সন্তানের সাথে যোগাযোগের অভাব হলে অনেক সময় সন্তান মানসিকভাবে বিষন্ন হয়ে পড়তে পারে। অফিসে সময় দেয়ার পর প্রতিদিন একটা সময় সন্তানের সাথে কাটানো কর্মজীবি মায়েদের জন্য খুবই উপকারী। সন্তানের সাথে কথা বলা খুনসুটি করা বা ওর পড়ার খোজ নেয়া। কাগজ কেটে কিছু বানানো বা ছবি আঁকা এসব করে সন্তানের সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। কখনই যেন সন্তানের এমন মন এনা হয় যে মা তাকে মনযোগ দেয় না। আবার বাইরে ছিলাম বলে ঘরে এসে সে যা বলে তাই করাও ঠিক হবে না। এতে সন্তান জেদি হয়ে যায়।

 

বেড়াতে যাওয়া

ছুটির দিনগুলোতে সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে যেতে হবে। সারা সপ্তাহ সন্তান সেই দিনের অপেক্ষায় থাকে মা কবে ঘরে থাকবে। সেদিন অল্প সময়ের জন্য বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরে এলে সন্তানের মন ফুরফুরে হওয়া যায়। মার্কেট প্লেসে না গিয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যান তাকে। অথবা কোনো জাদুঘর বা পার্কে। হাটাহাটি দৌড়ঝাঁপ করুন ওর সাথে। নিজের যেমন ভালো লাগবে সন্তানেরও ভালো লাগবে।

আপনার বেবির বয়স কম হলে বাইরে নিয়ে যাবার সময় ভাল মানের ডায়াপার পরিয়ে নিন। এতে করে আপনার বা বেবির, কারও আনন্দে ব্যাঘাত ঘটবেনা।

পরিশিষ্টঃ

সন্তানের ভালোমন্দ পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও মাকেই ভাবতে হয়। মায়ের চেয়ে বেশী তো আর কেউ সেটা ভালো বুঝতে পারবেন না! সেটা ভেবেও নারীরা কর্মক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন এবং রেখে চলেছেন। এমন অনেক উদাহরণ আমাদের আশে পাশেই আছে। মনোবল আর ইচ্ছাই পারে অনেক কঠিন কাজে সফলতা এনে দিতে।