গর্ভপাতের পর আবার বাচ্চা নিতে ভয় পাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেল আপনার জন্যই

১০টি প্রেগন্যান্সির ১টি অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত হতে পারে

 

আপনার কখনো গর্ভপাত হয়ে থাকলে জানবেন যে আপনি একা নন। কিন্তু শুধু হিসাব দিয়ে তো আর আপনাকে সান্তনা দেয়া যায়না। একটি প্রেগন্যান্সি মানে একটি স্বপ্ন, অনাগত সন্তানের জন্য কত কি পরিকল্পনা। আর সেই সব যখন হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায়, আর আপনি হসপিটাল থেকে ফিরে আসেন শূন্যতা নিয়ে, এ কষ্টের কথা আসলে ভাষায় বুঝিয়ে বলা সম্ভব না।

তবে মানুষ বলেই আমরা আবারো স্বপ্ন দেখতে চাই।মা হবার আকাঙ্খায় আপনি আবারও চেষ্টা করতে চান। যদিও মনের ভেতরের ভয় থেকেই যাচ্ছে। ভাবছেন এবারও যদি খারাপ কিছু হয়। ভাবছেন আপনি কি আদৌ সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারবেন।

আপনার এসব ভয় আর দুশ্চিন্তা দূর করতেই আমাদের আজকের এই আর্টিকেল।

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত কেন হয়ঃ

গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের শিশু অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে নষ্ট হয়ে গেলেই আমরা একে গর্ভপাত বলে থাকি। রিসার্চ বলে যে প্রতি ২টি গর্ভপাতের মধ্যে ১টি হয় গর্ভের শিশুর ক্রোমজম জনিত ত্রুটির কারণে।

কিন্তু তার মানে এই না যে আপনার অথবা আপনার স্বামীর এতে কোনও হাত আছে। ভ্রুণ গঠন হবার সময়ে এই ত্রুটি নিজ থেকেই হতে পারে। এর কারণ এখনও আমাদের অজানা।

এছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাতের জন্য কারণ হতে পারে মা এর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েড অসুখ, অথবা জরায়ুজনিত কোন সমস্যা।

তবে ডাক্তারদের মতে অনেক ক্ষেত্রেই গর্ভপাতের সঠিক কারণ খুঁজে বের করা সম্ভব হয় না।

একটা কথা বলি আপু, গর্ভপাতের কারণ খুঁজে বের করার দুশ্চিন্তা করার আগে আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, হাজারো মায়েরা এক-আধবার গর্ভপাতের পর আবারো প্রেগন্যান্ট হয়েছেন এবং সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন।

যেহেতু আপনি এই আর্টিকেলটি এতদূর পড়েই ফেলেছেন তাই বোঝাই যাচ্ছে যে আপনি গর্ভপাতের পর আবার প্রেগন্যান্ট হওয়া নিয়ে নানান শঙ্কায় আছেন। তাই আপনার সব সন্দেহ দূর করতে আপনার মনের ভেতরে তাড়া করে বেড়ানো ৪টি প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছি একে একে।

গর্ভপাতের পর আবার বাচ্চা নেবার পথে যে ৪টি প্রশ্ন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় (এবং তার উত্তর)

(১)এবারেও গর্ভপাত হবার আশঙ্কা আছে কি?

স্বপ্ন একবার ভেঙ্গে গেলে আমরাও ভেঙ্গে পড়ি। এটাই স্বাভাবিক।আবারও স্বপ্ন দেখার পথে প্রথম বাঁধা হচ্ছে শঙ্কা। এবারেও যদি অঘটন ঘটে – এই ভয়।

গর্ভপাত সাধারণত একবারই ঘটে

অনলাইন হেলথ ম্যাগাজিন Mayo Clinic জানাচ্ছে যে একজন মায়ের জীবনে গর্ভপাত সাধারণত একবারের বেশি হয় না। প্রতি ১০০ জন মায়ের মধ্যে মাত্র  ১ জনের একাধিকবার গর্ভপাত হয়ে থাকতে পারে।

(২)আমি কি সুস্থ্য বাচ্চা জন্ম দিতে পারব?

মা হওয়াটা অনেক বড় জার্নি। প্রেগন্যান্ট হওয়া, সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেয়া, এবং এরপর তার যত্ন এবং মানুষ করে গড়ার চিন্তা।

তবে একবার গর্ভপাত হবার পর আবার প্রেগন্যান্ট হয়ে সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেবার সম্ভাবনা কোনভাবেই কমে যায়না। তাই আপনার বাচ্চা সুস্থ হয়ে জন্মাবার সম্ভাবনা আর দশটা মায়ের মতোই থাকছে।

গর্ভপাতের পর আবারও প্রেগন্যান্ট হবার ও সুস্থ বাচ্চা দেবার সম্ভাবনা কমে যায়না

American Pregnancy ওয়েবসাইট –এর মতে একবার গর্ভপাত হবার পর দ্বিতীয়বারের চেস্টায় সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেবার হার প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনেরও বেশি।তাই আপনার মনে যদি এই ভয় থেকে থাকে যে আপনি সুস্থ্য বাচ্চা জন্ম দিতে পারবেন কিনা, এখনই তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

(৩)আবার গর্ভধারণের আগে আমাকে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?

গাইনোকোলিজিস্টরা এই প্রশ্নটি প্রায়ই ফেস করেন। এবং এর উত্তর একেকজনের কাছে একেকরকম হতে পারে।

কেউ বলবেন ছয়মাস অপেক্ষা করুন, কেউ বলবেন এক বছর। তবে আমরা নিজেদের মতামত আপনার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছিনা। বরং জেনে নিন রিসার্চ কি বলে।

National Institute of Health এর রিসার্চ বলছে যে গর্ভপাতের পর তিনমাসের মধ্যে আবার প্রেগন্যান্ট হলে সুস্থ্য বাচ্চা জন্ম দেবার সম্ভাবনা বেশি অন্যদের তুলনায় (যারা বেশি দিন অপেক্ষা করেছেন)।

 “গর্ভপাতের পর বাচ্চা নিতে দীর্ঘ বিরতির পক্ষে আমরা কোন যুক্তি খুঁজে পাইনি” – অধ্যাপক Karen Schliep

 

তবে পুনরায় বাচ্চা নেবার চেস্টার আগে আপনাকে কিছু ব্যাপারে অবশ্যই সাবধান হওয়া উচিৎ। যেমন –

o   গর্ভপাতের পর রক্ত যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হবার আগে স্বামীর সাথে মিলিত হতে পারবেন না। এতে ইনফেকশন হবার ঝুঁকি থাকে। তাই অন্তত একটি পিরিয়ড হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

o   আপনার গর্ভপাত যদি মোলার অথবা এক্টপিক প্রেগন্যান্সির কারণে হয়ে থাকে তাহলে আবার বাচ্চা নেবার চেষ্টা করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

o   আপনার যদি এর আগে একাধিকবার গর্ভপাত হয়ে থাকে তাহলে আবার চেস্টা করার আগে আপনার কিছু পরীক্ষা অবশ্যই করে নিতে হবে (বিস্তারিত পরের অংশে)

(৪)আরেকবার গর্ভপাতের ঝুঁকি আমি কিভাবে কমাতে পারি?

শুরুর দিকে বলেছিলাম যে গর্ভপাতের সঠিক কারণ অনেক ক্ষেত্রেই বলা যায়না, এবং গর্ভপাত সাধারণত একবারের বেশি হয় না।

পুনরায় গর্ভপাত এড়ানোর জন্য আপনার এক্সট্রা কিছু করার নেই। তাই স্বাভাবিক একজন গর্ভবতী মায়ের যে সাবধানতাগুলো মেনে চলতে হয় আপনিও তাই করুন।

গর্ভবতী থাকাকালিন যা কিছু মেনে চলা উচিৎঃ

o   গর্ভধারণের আগে থেকে এবং গর্ভকালীন প্রথম তিনমাস ফলিক এসিড (ট্যাবলেট) খাবেন।

o   হালকা ব্যায়াম করুন

o   ভারি কাজ এড়িয়ে চলুন

o   ধুমপান এবং এলকোহল একেবারেই না

o   দিনে দু’কাপের বেশি চা-কফি খাবেন না

o   তাজা শাকসব্জি ও ফলমূল খাবেন

o   মাছ-মাংস ভালভাবে সিদ্ধ করে রান্না করে খাবেন

o   কাঁচা/আধাসেদ্ধ ডিম অথবা কাঁচা (সরাসরি খামার থেকে নেয়া) দুধ খাবেন না।

o   গরু-খাসির যকৃৎ খাবেন না।

o   যেকোনো ওষুধ খাবার আগে ডাক্তারের সাথে আলাপ করুন।

কোন অবস্থায় গর্ভপাতের পর আবার বাচ্চা নেবার আগে বিশেষায়িত পরীক্ষা-পরামর্শ দরকার

আপনার যদি ডায়াবেটিস অথবা থাইরয়েড জনিত সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে গর্ভপাতের পর আবার বাচ্চা নেবার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে।

আর আপনার যদি একাধিক বার গর্ভপাত হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষায়িত পরীক্ষা করে এর কারণ এবং সমাধান খুঁজে পেতে পারেন।

গর্ভপাতের কারণ অনুসন্ধান করার জন্য সাধারণত নিচের পরীক্ষাগুলো করা হয়ঃ

o   রক্ত পরীক্ষা

o   ক্রোমজম পরীক্ষা

o   আল্ট্রাসনোগ্রাফি

o   হিস্টেরোসকপি

o   হিস্টেরোসালপিঙগ্রাফি

o   সনোহিস্টেরোগ্রাম

সমস্যা যাই হোক, চেস্টার পথ খোলাই আছে। তাই একাধিকবার গর্ভপাত হলেও হতাশ হবেন না। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ইতিকথাঃ

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত অবশ্যই পীড়া দেয়। আপনি হয়তো নিজেকেই এর জন্য দায়ী ভাবেন অথবা ভাগ্যকে দোষ দেন।

তবে সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন আপনি শুধু একাই দেখেন না। আপনার পরিবারের অন্য সবাইও আপনার সাথে সাথেই স্বপ্ন দেখে।

তাই গর্ভপাত হবার পর হাল ছেড়ে দেবেন না। দেখলেনই তো, গর্ভপাতের পরে স্বাভাবিকভাবেই প্রেগন্যান্ট হওয়া এবং সুস্থ্য বাচ্চা জন্ম দেবার সম্ভাবনা মোটেও কমে যায়না।