গর্ভাবস্থায় বাইরে কাজঃ কীভাবে নিরাপদ রাখবেন নিজেকে

গর্ভাবস্থায় বাইরের কাজ নিরাপদে করার টিপস

মিলি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। সে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর ও দিব্যি অফিস করেছে এবং একটি সুস্থ বাচ্চার ও জন্ম দিয়েছে। আসলে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ও কাজ চালিয়ে যাওয়া যায় যদি সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে চলেন তাহলে।  বেশীরভাগ কর্মজীবী নারীই প্রেগনেন্ট অবস্থায়ও কাজ করতে পারেন। কোন কোন নারী সন্তান জন্ম দেয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় কাজ করাটা হতে পারে চ্যালেঞ্জিং। গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসে কর্মক্ষেত্রে অস্বস্তি দূর করে কাজ করাটা বেশ কঠিন। গর্ভাবস্থায় নিরাপদে ও স্বস্তির সাথে কাজ করার জন্য কিছু টিপস জেনে নিব আজ।

বমি বমি ভাব

যদিও বমি বমি ভাবটা সকালের দিকেই হয়ে থাকে বেশি। তাই একে মর্নিং সিকনেস ও বলা হয়। তবে দিনের যেকোন সময়ই হতে পারে এমনটা। বমি বমি ভাবের সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য যা করতে পারেন –

·        যে গন্ধ বা খাবার আপনাকে বিরক্ত করে তা এড়িয়ে চলুন।

·        স্ন্যাক্স হিসেবে বিস্কুট বা বাদাম খেতে পারেন এবং লো-ফ্যাট এর খাবার (ভাত, টোস্ট, আপেল সস ইত্যাদি) খান

·        ৩ বারের বদলে ৫-৬ বার অল্প অল্প করে খান।

·        প্রচুর তরল খাবার খান।

·        প্রচুর বিশ্রাম নিন।

ক্লান্তি

গর্ভাবস্থায় সাধারণের চেয়ে একটু বেশিই ক্লান্ত বোধ করতে পারেন আপনিবিশেষ  করে গর্ভাবস্থার প্রথম ও শেষের দিকে। গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি দূর করার জন্য যা করতে পারেন –

·        বিরতি নিন, আপনার চেয়ার থেকে উঠে কয়েক মিনিট হেঁটে আসুন এবং লাঞ্চ ব্রেকে একটু ঘুমিয়ে নিন।

·        রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরুন, এতে পরিপূর্ণ বিশ্রাম পাবেন।

·        ব্যায়াম করুন যখনই সম্ভব। এটি আপনাকে সারাদিনে এনার্জি পেতে সাহায্য করবে।

·        সারাদিনে প্রচুর তরল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। কিন্তু ঘুমানোর আগে তরল খাবার বা পানি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন যাতে মাঝরাতে উঠে ওয়াশ  রুমে যেতে না হয়।

·        স্বাস্থ্যকর খাবার খান, বিশেষ করে আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিৎ।

·        শিথিল থাকার চেষ্টা করুন এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন।

কাজের পরিবেশে নিরাপদ থাকার উপায় :

আপনার এবং আপনার বেবির জন্য চারপাশের পরিবেশ নিরাপদ রাখাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি ধরণের কাজ করছেন তার উপর গর্ভাবস্থায় আপনার নিরাপত্তা নির্ভর করছে। এমন কিছু মারাত্মক উপাদান আছে যার বিষয়ে সতর্কতার প্রয়োজন।

·        ধাতব উপাদান যেমন- মার্কারি বা লেড নিয়ে কাজ করেন যারা

·        অনেকে রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ পণ্য উৎপাদনের কাজ (পরিষ্কারক দ্রবণ, কীটনাশক বা গ্যাস) করেন

·        তেজস্ক্রিয় বর্জ্য, বিকিরণ বা অন্যান্য বিপদজনক পদার্থ (ক্যান্সার নিরাময়ের ঔষধ প্রস্তুত কাজে বা এক্স-রে) তৈরির কাজে নিয়োজিত থাকলে।   

এ ধরণের কাজের ক্ষেত্রে যথাযথ নিরাপত্তা উপকরণ যেমন- মাস্ক, গাউন এবং গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যদি আপনি এ ধরণের  কাজের সাথে যুক্ত থাকেন। কারণ এগুলোর সংস্পর্শে শিশুর জন্মগত ত্রুটি, গর্ভপাত বা অন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই আপনার চিকিৎসকের কাছে আপনার কর্মস্থলের পরিবেশ এবং কোম্পানির দেয়া নিরাপত্তা উপকরণের বিষয়ে বিস্তারিত বলুন।

আপনি যদি উচ্চমাত্রার তাপের পরিবেশে কাজ করেন তাও আপনার চিকিৎসককে জানান। কারণ অত্যধিক তাপের পরিবেশে কাজ করলে আপনার শরীরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পেতে পারে। আর আপনার শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি হলে তা আপনার গর্ভস্থ শিশুর জন্যও মারাত্মক হতে পারে।

আপনি যদি শিশুদের নিয়ে কাজ করেন বা হেলথ সেন্টারে কাজ করেন তাহলে আপনার অসুস্থ মানুষদের কাছ থেকে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকেন পক্স, রুবেলা বা ফ্লু তে আক্রান্ত হওয়া গর্ভাবস্থার জন্য খুবই মারাত্মক। তাই আপনাকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সংক্রমণ মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত হাত ধুয়ে নিতে হবে। যদি মনে করেন যে আপনার ও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কাজের পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ তাহলে নিয়োগ কর্তার সাথে সরাসরি কথা বলুন।

কিছু কাজ আছে শারীরিক পরিশ্রমের সাথে সম্পর্কিত যেমন- ভারী জিনিস উঠানোর কাজ যদি আপনাকে করতে হয় তাহলে তা গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ নয়। প্রেগনেন্সির প্রথম অবস্থায় বমি বমি ভাব, অবসাদ এবং মাথা ঘোরানোর সমস্যা হয় বলে এ ধরণের কাজ করা নিরাপদ নয়। প্রেগনেন্সির শেষের দিকে ও অতিরিক্ত ওজন বহন করা আপনার অনুভূতির ভারসাম্যকে নষ্ট করবে এবং পড়ে যেয়ে ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবেতাই আপনার নিয়োগকর্তার সাথে কথা বলুন প্রেগনেন্সির সময়ে  আপনাকে অন্য দায়িত্ব দেয়ার জন্য। যদি কোন কিছু উত্তোলন করতে হয় তাহলে এই টিপসগুলো অনুসরণ করুন –

·         আপনার পদতল ও কাঁধ প্রশস্থ করে রাখুন

·         হাঁটু বাঁকা করুন তবে পিঠ সোজা রাখুন এবং পশ্চাৎদিক উঁচু করুন

·         এবার বস্তুটি পায়ের উপর ভর দিয়ে হাতে টেনে উঠান, পেছনের দিকে চাপ দেবেন না

·         সম্ভব হলে ওজন কমিয়ে উত্তোলনের চেষ্টা করুন যেমন- একটি বড় বক্সের জিনিস ২/৩ টি বক্সে নিন।

যদি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় তাহলে পায়ে রক্ত জমা হয়। এর ফলে মাথা ধরা, অবসাদ এবং পিঠে ব্যথা হতে পারে। তাই দাঁড়ানোর সময়

·         একটি ছোট টুলের উপর এক পা উঠিয়ে রাখুন

·         কিছুক্ষণ পর পর পা বদল করে নিন

·         আরাম দায়ক জুতা পরুন

যদি কম্পিউটারে কাজ করেন বা ডেস্কের কাজ করেন তাদের হাতের কব্জি, হাত, ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে ব্যথা হয় এবং চোখেও চাপ পড়ে অনেক। এজন্য যা করবেন তা হল –

·         কাজের মাঝে বিরতি নিয়ে অফিসের মধ্যেই বা বাহিরে হেঁটে আসুন কিছুক্ষণ

·         আপনার চেয়ার, কি বোর্ড এবং অফিসের অন্যান্য উপকরণগুলো আরামদায়ক  ভাবে ব্যবহার করুন।

·         পিঠের সাপোর্ট দেয়ার জন্য একটি কুশন রাখুন চেয়ারে।

·         পা দুটো একটু উপরের দিকে উঠিয়ে রাখার জন্য ছোট টুল রাখুন।

আপনার যদি পূর্বে প্রি-ম্যাচিউর বেবি হয়ে থাকে, মিসক্যারেজ হয়ে থাকে, উচ্চ  রক্তচাপের সমস্যা থাকে, যমজ বেবি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং আপনি যদি ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন তাহলে আপনার চিকিৎসক হয়তো আপনার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আপনাকে কাজে যেতে নিষেধ করবেন। তাই ডাক্তারের সাথে কথা বলে জেনে নিন আপনার অবস্থা। 

Contact our call center free of charge to consult doctors at Supermom for any children and maternity affairs from 9am to 5pm from Sunday-Thursday (except Government holidays). Call our toll free number 08000-888-000.