গর্ভাবস্থায় ৫টি কমন অসুবিধা যা নিয়ে ঘাবড়াবার কারণ নেই

গর্ভকালীন মূহুর্তটি একজন নারীর জন্য একদিকে যেমন আনন্দের, অন্য দিকে বেশ দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণও।

এর একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে, প্রায় সব নারীই গর্ভাবস্থায় কিছু সাধারণ অসুস্থতা বা অস্বস্তিকর অবস্থার ( pregnancy discomfort ) মুখোমুখি হন। কিন্তু যথাযথ তথ্য জানা না থাকার কারণে, তারা এগুলো নিয়ে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন; যা তাদের মারাত্মক ঝুঁকির মাঝে ফেলে দিতে পারে। অথচ একটু সচেতন থাকলেই এসব এড়ানো যেতে পারে।
 
আজকের লেখাতে আমরা এরকম কিছু pregnancy discomfort নিয়ে আলোচনা করবো।

পিঠে ব্যাথা

কারণ 

যেহেতু গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের দেশের ওজন বেড়ে যায়, এই অতিরিক্ত ওজন মেরুদন্ডকে সামনের দিকে চাপ দিতে থাকে এবং দেহের ভারসাম্য রাখতে সমস্যা তৈরি হয়।

পরামর্শ 
১) প্রথমেই জেনে রাখুন, এরকম ক্ষেত্রে দুঃশ্চিন্তা করার কিছু নেই। গর্ভধারণ কালীন সময়ে এরকম ব্যথা হতে পারে।

২) দেহের অংগভঙ্গি ঠিক রাখার অভ্যাস করুন। চেষ্টা করুন দেহের ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে।

৩) যেকোনো ধরণের জিনিস হাতে উঠানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। মেঝে থেকে কোন জিনিস উঠাতে হলে হাঁটু বাঁকা করুন, কোমর নয়।

৪) উঁচু হিলের জুতো একদম এড়িয়ে চলুন। ফ্লাট জুতো পড়ুন, যা আরামদায়ক ও এসময়ে নিরাপদ।

৫) দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকবেন না, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে অল্প করে বসে বিশ্রাম নেবেন।

৬) বিভিন্ন ধরনের হালকা ব্যয়াম করুন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে।

৭) পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

৮) চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেকোনো ধরণের ওষুধ পরিহার করুন। কারণ এসব ওষুধ উপকার না করে উলটো আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে।

স্তনের আকৃতির পরিবর্তন

কারণ
গর্ভাবস্থায় নারীদের স্তন দুধ উৎপাদনের জন্য তৈরি হয়ে ওঠে। এসময় দুগ্ধ গ্রন্থি বা মিল্ক গ্ল্যান্ড মোটা হয়ে যায় এবং ফ্যাটি টিসু বা চর্বি জমে স্তনের আকার বড় হতে শুরু করে। স্তনের স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায়। রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাবার কারণে রক্ত কণিকাগুলো বড় হয়ে যায় এবং নীলাভ রঙের শিরাগুলো স্তনের ত্বকে দেখা যেতে পারে। এছাড়া স্তনের নিপল ও এর চারপাশের গোল কালো জায়গাটুকুতে ( যাকে আরিওলা বলে) কালো দাগ ও ছোট ছোত গুটির মত জিনিস দেখা যেতে পারে। গর্ভকালীন সময়ের শেষ ৩ মাসে অনেক নারী তাদের স্তনের নিপল থেকে তরল জাতীয় পদার্থ নিঃসরিত হতে দেখতে পারেন, যাকে শাল দুধ বলা হয়। তবে ঐ সময়ের মাঝে শাল দুধ উৎপন্ন না হলেও দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই।

পরামর্শ
১) এরকম ব্রা ব্যবহার করুন যা আপনার জন্য আরামদায়ক।

২) ডিজপোজেবল ব্রেস্ট প্যাড ব্যবহার করতে পারেন।

৩) স্তনের নিপলের অংশটুকুতে সাবান ব্যবহার করবেন না, কারণ সাবান ঐ অংশের ত্বক শুষ্ক করে দেয়। উষ্ণ পানি ব্যবহার করতে পারেন ঐ স্থানটি পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য।

কোষ্ঠকাঠিন্য

কারণ
এটা আরেকটা বিষয় যা নিয়ে গর্ভবতী মায়েরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন। কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ হচ্ছে গর্ভাবস্থায় দেহের হরমোনের প্রভাব। আরেকটা কারণ হচ্ছে এসময় দেহের পরিপাকতন্ত্র অর্থাৎ যা দিয়ে খাবার পরিপাক হয়, সেটা নিজের স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যায়। কারণ গর্ভাবস্থায় নারীদের জরায়ু বড় হতে থাকে। 

পরামর্শ
১) প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার বিশেষ করে পানি পান করুন।

২) প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন।

৩) অল্প করে কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর খাবার খান ও ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার অভ্যাস করুন।

৪) তাজা ফল ও উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খান।

৫) আয়রন সাপ্লিমেন্ট খেতে হলে জুস বা ফলের রসের সাথে খান, নয়তো কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যেতে পারে।

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
কারণ
গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ও শেষ ৩ মাস এ সমস্যাটি দেখা যায়। এসময় জরায়ু বড় হয়ে যাওয়াতে মুত্রথলিতে চাপ পড়ে ও প্রস্রাব ঘন ঘন হয়। 

পরামর্শ
এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে  Kegel exercise করতে পারেন। যোনির চারপাশের মাংসপেশীতে চাপ দিন ও কয়েক সেকেন্ড পরে ছেড়ে দিন। এভাবে অন্তত ১০ বার করুন। এছাড়া এ ভিডিওটি দেখতে পারেন https://www.youtube.com/watch?v=ToDCJ8gJd_U

অনিদ্রা

কারণ
গর্ভাবস্থার শুরু দিকে শরীরের এ নতুন অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে কিছু সমস্যা হয়, ফলে ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। কি করণীয়?

পরামর্শ
১) নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

২) ঘুমুতে যাবার আগে উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করুন।

৩) চারপাশে অনেক শব্দ বা আলো আছে-এরকম জায়গায় ঘুমাবেন না।

৪) ঘুমানোর জন্য নিজের জন্য সুবিধাজনক পজিশন নিজেই বেছে নিন।

৫) ঘুমানোর আগে মন সতেজ রাখে এরকম বই পড়তে পারেন।

৬) চা-কফি খাবেন না। দরকার হলে শরীরে ম্যাসাজ নিন।

৭) ঘুমের জন্য নির্ধারিত রুটিন তৈরি করুন ও মেনে চলুন।


বমি বমি ভাব/ বমি হওয়া
কারণ 

সাধারণত গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ৩ মাসে এ সমস্যাটি হয় ও পরে আর থাকে না। এটাকে "মর্নিং সিকনেস" বলা হলেও দিনের যেকোনো সময়ে বমির উদ্রেক ঘটতে পারে। 

পরামর্শ
১) সকালে ঘুম থেকে উঠে বমি বমি ভাব হলে রুটি বা ক্র্যাকার খেতে পারেন। এসব খাবার রাতে ঘুমুতে যাবার আগেই বিছানার পাশে রাখতে পারেন।

২) ঘুম ভেঙ্গে হুট করেই বিছানা ছাড়বেন না। ধীরে সুস্থে উঠুন।

৩) সারাদিনই অল্প অল্প করে কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খান। তেল বা অধিক মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।

৪) আদা, পুদিনা দিয়ে চা খেতে পারেন। তবে সব ভেষজ উদ্ভিত এসময়ের জন্য উপযোগী নয় তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫) ঘরের দরজা জানালা খোলা রাখুন যেন বাইরের তাজা বাতাস ঘরে প্রবেশ করতে পারে।

৬) বমিভাব হলে ঠান্ডা বরফ মুখে নিয়ে চুষতে পারেন, উপকার পাবে। তবে ঠান্ডার সমস্যা থাকলে এটা এড়িয়ে যান।


মাথাব্যথা করা

কারণ 

দেহে রক্ত চলাচল বেড়ে গেলে ও হরমোনজনিত কারণে মাথাব্যথা করতে পারে।

পরামর্শ

) এটা নির্ণয় করতে চেষ্টা করুন যে কি কি কারণে আপনার মাথা ব্যথা করে। যেমন- শব্দ, সিগারেটের ধোঁয়া, গুমোট বদ্ধ ঘর বা ঘরের লাইটবাল্বের আলো।

২) পর্যাপ্ত ঘুমাতে চেষ্টা করুন।

৩) সুষম খাবার ও পানি পান করুন নিয়মিত।

৪) ঘাড়, কাঁধ, মুখ ও মাথার তালুতে ম্যাসাজ নিন।

৫) মেডিটেশন করতে পারেন।

এছাড়া আরো অনেক লক্ষণ রয়েছে, যা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে জরুরী নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা ও মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকা। এটা মা ও অনাগত সন্তানের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০