সন্তান নেবার মত আর্থিক অবস্থা কি আপনার হয়েছে? যাচাই করুন সহজেই!

সন্তান নেওয়া যেকোন দম্পত্তির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। এই সিন্ধান্তের সাথে একটি শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন নির্ভর করে।  প্রতিটি বাবা মা চান সন্তানকে সুন্দরভাবে বড় করতে। সন্তানের প্রতিটি ইচ্ছা পূরণ করতে। আর এই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য প্রয়োজন হয় অর্থের। অর্থের প্রয়োজন পড়ে সন্তান জন্ম হওয়ার আগ থেকেই।

তাই সন্তান নেওয়ার মত বড় কোন সিন্ধান্ত নেওয়ার আগে অব্যশই অর্থ সংক্তান্ত কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত।  মনে রাখবেন, সন্তান জন্ম দিয়ে বাবা মার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সন্তানকে সঠিকভাবে বড় করে মানুষ করার মধ্যে ই বাবা মার সার্থকতা নিহিত।  

একজন সন্তানের বাবা-মা হওয়া যেমন আনন্দের তেমনি অনেক দায়িত্বের। বাবা-মার আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে সন্তানের ভবিষ্যৎ। তাই আপনাকে আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে হবে আগে থেকেইকিছু খরচ আপনার প্রতিদিনের খরচে অন্তর্ভুক্ত হবে, যেমন সন্তানের মৌলিক চাহিদাসমূহ, সন্তানের জন্য সঞ্চয়, সন্তানের শিক্ষার খরচের কথা ভাবা। আর্থিক পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন। এরসাথে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করে জেনে নিন আপনি আসলে সন্তান নেওয়ার জন্য আর্থিকভাবে প্রস্তুত কিনা।  

আপনার আর্থিক পরিকল্পনা তৈরিতে তিনটি বিষয়কে মাথায় রাখতে পারেন।

·       আনুমানিক মেডিক্যাল খরচ অনুমান করে রাখুন

·       কর্মস্থল থেকে কয়দিন ছুটি নিবেন তার একটি খসড়া

·       শিশুর আনুমানিক খরচ অনুমান

১। বীমা করা

একটি শিশু বড় করা বেশ ব্যয়বহুল। এই খরচ কিছুটা কমিয়ে দেবে স্বাস্থ্য বীমা। তাই শিশুর আগমনের আগেই তার জন্য বীমা করিয়ে রাখতে পারেন।

২। মাতৃকালীন বা পিতৃকালীন ছুটির সময় আর্থিক পরিকল্পনা

আপনি মাতৃকালীন কত দিনের ছুটি নিতে পারবেন? কিংবা আপনার সঙ্গী কতদিনের পিতৃকালীন ছুটি নিতে পারবে? এই ছুটি চলাকালীন সময়টুকু আপনাদের খরচ কেমন হবে, তার একটি আর্থিক পরিকল্পনা আগেই চিন্তা করে নিন।

৩। শিশুর আনুমানিক খরচের তালিকা তৈরি করা

শিশু জন্ম নেওয়ার আগে তার খরচের আনুমানিক একটি তালিকা তৈরি করে নেওয়া উচিত। যেমন শিশু খাদ্য, ডায়াপার, শিশুর পোশাক,শিশুর খেলনা ইত্যাদি। শিশু আস্তে আস্তে বড় হতে থাকবে আর তার সাথে সাথে  বাড়তে থাকবে খরচপ্রথমেই একটি সুন্দর পরিকল্পনা করে নিতে হবে যে প্রতিমাসে বাচ্চার জন্য কত টাকা খরচ করবেন। শিশুর খরচের খাতে  মেডিক্যাল খরচ রাখতে ভুলবেন না যেন।

৪। পোষ্ট ডেলিভারি বাজেট

ডেলিভারি হওয়ার পর প্রতিদিনের সংসারের খরচের সাথে বাড়তি কিছু খরচের খাত যুক্ত করুন। শিশুর খাদ্য, ডায়াপার, খেলনা, শিশুর কাপড়, শিশুর প্রয়োজনীয় জিনিস ইত্যাদি কেনার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখুন।

৫। ক্যারিয়ারে পরিবর্তন

সন্তান নেওয়ার আগে চিন্তা করে নিন, আপনি এখন যেই কাজে আছেন এই কাজ থেকে সন্তানকে সময় দিতে পারবেন কিনা? আপনি কি কাজ পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন? যদি আপনি সন্তান নিতে ইচ্ছুক হন, তবে এই মুহুর্তে কাজ পরিবর্তন না করাই ভাল। নতুন চাকরিতে দায়িত্ব বেশি থাকায় সন্তানকে সময় দিতে পারবেন না। পরিবারে দুইজন চাকরিজীবী হলে, কে কখন সন্তানকে সময় দিবে তা আগে থেকেই ভেবে রাখুননিজেদের মধ্যে খোলাখুলি আলোচনা করে নিন। 

৬। সন্তানের দেখাশোনা

আপনারা দুই জন যদি কর্মজীবী হন, তবে আপনাদের অনুপস্থিতিতে কে সন্তান দেখাশোনা করবেন সেটা আগেই ঠিক করে রাখুন। আপনার বাবা-মা অথবা শ্বশুরবাড়ির কেউ যদি আপনার সন্তানের দেখাশুনা করতে চায় তবে আপনার খরচ কিছুটা বেঁচে যাবে। কিন্তু যদি তেমন না হয় তখন আপনাকে অবশ্যই আপনার সন্তানের দেখাশুনা করার জন্য বেবি সিটার বা গৃহকর্মীর সাহায্য নিতে হবে।

৭। সংসার খরচ

সন্তানকে দেখাশোনার জন্য হয়তো আপনাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হতে পারে। তখন কি একজনের রোজগারে সংসার চলবে কিনা তা ভেবে দেখুন। সংসারের খরচের পাশাপাশি সন্তানের বাড়তি খরচের ভার একা আপনার সঙ্গীর পক্ষে বহন করা সম্ভব হবে কিনা তা চিন্তা করে নিন। আপনার কি কি মানিয়ে নিতে হবে, কিভাবে সঞ্চয় করতে হবে তা নিজেদের মধ্যেই ঠিক করে নিন।

৮। সন্তানের জন্য সঞ্চয়

সন্তানের ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে তার জন্য সঞ্চয় জন্মের পর থেকে শুরু করুন। কীভাবে,কোন ব্যাংকে, কেমন সেভিং অ্যাকাউণ্ট আপনি আপনার সন্তানের জন্য খুলতে চান, তা আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখুন। সন্তানের শিক্ষা খাতে একটি বড় অঙ্কের টাকা খরচ হবে, তাই আগে থেকে সঞ্চয় না করলে পরবর্তিতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।  

৯। ঋণ পরিশোধ

আপনার যদি লোন থাকে, তাহলে সন্তান নেওয়ার আগে তা পরিশোধ করে ফেলুন। তা না হলে ঋণ পরিশোধের সাথে সন্তানের খরচকে আপনার বোঝা মনে হবে। আর্থিক চিন্তা আপনাকে বাবা-মা হওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবে। তাই সন্তান নেওয়ার আগে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করে ফেলুন।

১০। নিজেদের মধ্যে আলোচনা

সন্তান নেওয়ার আগে আপনার সঙ্গীর সাথে আলাপ আলোচনা করে নিন। ডেলিভারি খরচ কে বহন করবে? যদি চাকরি ছাড়তে হয়, তবে কীভাবে সংসার খরচ চালাবেন? সন্তানকে কেমন স্কুলে পড়াতে চান, তার পড়ার খরচ কেমন হতে পারে ইত্যাদি নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে নিন।

শিশু খাদ্যের দাম, শিশু পোশাকের দাম অথবা শিশু সংক্রান্ত যেকোন বিষয় জানতে চাইলে আপনি সদ্য বাবা মায়েদের  সাথে আলাপ  আলোচনা করে নিতে পারেন। নতুন বাবা- মায়ের কাছ থাকে আপনি শিশুর খরচ সম্পর্কে একটি ধারণা পাবেন।

একটি সন্তান জন্ম দিয়ে বাবা-মার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং সন্তানকে বড় করার মত গুরু দায়িত্ব শুরু হয়। তাই সন্তানকে ভাল ভাবে বড় করতে চাইলে একটি সঠিক আর্থিক পরিকল্পনার বিকল্প নেই। সন্তান নেবার মত আর্থিক অবস্থা কি আপনার হয়েছে?

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০