বাচ্চা হবার পর অনেক চুল পড়ছে? জেনে নিন সহজ ৫টি সমাধান

গর্ভবতী অবস্থায় নারীর চুল নতুন জীবন পায়। চুল বেশ ঘন হয় এবং দেখতেও সুন্দর হয়ে ওঠে। কিন্তু বাচ্চা প্রসবের পরই শুরু হয় বিপত্তি। যেদিকে যাই শুধু চুল আর চুল এমন বলতে শোনা যায় অনেককে। কারন তখন অনেক বেশী চুল পড়ে। বিছানায়, ঘরে, বাথরুমে প্রচুর চুল দেখতে পাওয়া যায় তখন। এটা কিন্তু কোনো ভিটামিনের অভাবে হয় তা কিন্তু না। গর্ভাবস্থায় শরীরে অ্যাস্ট্রোজেন নামক হরমোন বেড়ে যায় যার ফলে চুল নতুন প্রাণ পায়। আবার প্রসবের পর এই হরমোন কমে যায় তাই তখন চুল পড়ে যায়। যা খুব স্বাভাবিক। প্রসব পরবর্তী সময়ে ছয় মাস পর্যন্ত চুল পড়বে এটা স্বাভাবিক। কারো কারো এক বছর পর্যন্ত চুল পড়তে থাকে। অনেকে বলেন যে নিজেকে টাক মনে হওয়া শুরু হয়েছে তার এত বেশী চুল পড়ার কারণে। হরমোনাল কারণে এই চুল পড়া পুরোপুরি রোধ করা তো সম্ভব নয় তবে কিছু ঘরোয়া উপায় আছে যা করলে চুলের এই দুর্দশা অনেকাংশেই দূর করা সম্ভব।  

 

গরম তেল ম্যাসাজ

তেল চুলের জন্য খুব ভালো একটি কন্ডিশনার রাতের বেলা তেল মাথায় দিয়ে সকালে শ্যাম্পু করে নেয়া- পদ্ধতি চুলের যত্নে অনেক সচেতন নারীই অবলম্বন করে থাকেন গরম তেলের ম্যাসাজ চুলকে আরো প্রাণবন্ত করতে সক্ষম কারণ হালকা গরম তেল স্কাল্পে ম্যাসাজ করলে সেখানকার চামড়ায় রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় যা চুলকে যোগায় শক্তি প্রেগন্যান্সির পর চুল পড়ার সমস্যা দূর করতে তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে চুল পড়া তো কমেই সাথে গরম তেলের ম্যাসাজ এক ধরণের প্রশান্তিও এনে দেয় এক্ষেত্রে বেস্ট হবে এক্সট্রা ভার্জিন গ্রেড নারিকেল তেল বেছে নেয়া। কারণ এটি বিশুদ্ধ থাকে, আর এন্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ 

যা লাগবে:

. একটি বড় গভীর ধরণের চামচ, বিশেষ করে ডালের চামচ হলে ভাল হয় কারণ এই চামচ গভীর হয়ে থাকে
. নারিকেল তেল (এক্সট্রা ভার্জিন গ্রেড)
. নারিকেল তেল (এক্সট্রা ভার্জিন গ্রেড)
 . মিল্ক প্রোটিন সমৃদ্ধ স্যাম্পু

চামচে নারকেল তেল নিয়ে গ্যাসের চুলা বা মোমবাতির আগুনের ওপর কিছুক্ষণ ধরে রাখুন তেল গরম হয়ে গেলে একটি বাটিতে রেখে দিন তেল হালকা গরম থাকা অবস্থায় চুলের প্রতিটি শ্যাফটে ধীরে ধীরে তেলটা ম্যাসাজ করে নিন এরপর তোয়ালেটি গরম পানিতে ভিজিয়ে সহ্য করা যায় এমন গরম থাকা অবস্থায় তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন প্রায় আধঘন্টা এভাবে রেখে ঠাণ্ডা পানিতে চুল শ্যাম্পু করে নিন।

 

ডিমের সাদা অংশ

ডিম আমাদের প্রতিদিনকার প্রোটিনের চাহিদা মেটায়। ডিমের সাদা অংশ চুলের প্রোটিনের ঘাটতি পুরণ করতে পারে। মাথার চামড়াকে স্বাস্থ্যকর রাখতে ডিমের সাদা অংশের জুড়ি মেলা ভার। চুল পড়া রোধে ডিমের সাদা অংশের ঘরোয়া একটি প্যাক খুব ভাল উপকার দিতে পারে।

যা লাগবেঃ
. দুইটি ডিমের সাদা অংশ
. নারিকেল তেল (এক্সট্রা ভার্জিন গ্রেড)

ডিমের সাদা অংশের সাথে নারিকেল তেল ভালো মতো মিশিয়ে নিন। এরপর চুলের আগাগোড়া ভালো মতো লাগিয়ে নিন। আধা ঘন্টা রেখে প্রোটিন যেমন মিল্ক সমৃদ্ধ শ্যাম্পু দিয়ে হালকা গরম পানিতে মাথা ধুয়ে নিন। এতে চুল পড়া দূর হবে তাই শুধু নয়, চুল অনেক মসৃণ আর নরম হবে। ম্যানেজ করতে আর খুব বেশী বেগ পেতে হবে না। 

 

আমলকি

চুলের যত্নে আমলকির ব্যবহার অতি পুরাতন। চুলকে শক্ত মজবুত করার জন্য প্রাচীন কালের বৈদ্যরা আমলকি ব্যবহার করার পরামর্শ দিতেন। আমলকি এখন রাস্তার পাশের দোকানগুলোতেও পাওয়া যায়। চাহিদাও কম নয়। আমলকি খুব ভালো কাজ করে তেলের সাথে। নারকেল তেলের সাথে আমলকির একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিতে পারেন ঘরেই।

যা লাগবেঃ

. এক লিটার নারকেল তেল

. আমলকি ১০/১২ টি

ভালো পরিষ্কার একটি পাত্রে নারকেল তেল নিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। তাতে আমলকিগুলো ছেড়ে দিন। তেল ফুটে এলে আমলকির রসে তা কালো হয়ে আসবে। তখন চুলা থেকে তেল নামিয়ে নিন। কাচের বোতলে সংরক্ষন করে তেল সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন। ভালো কোনো হার্বাল শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল আরো বেশী মজবুত হবে।

 

 

মেথি

চুলের যত্নে মেথিও একটি প্রাচীনতম উপাদান। সারারাত কিছু মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই পানিটা মাথার চুলে লাগিয়ে আধা ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে নিন। দেখবেন চুল মজবুত হয়ে উঠছে। এছাড়া মেথি বেটে নিয়ে সেই পেস্ট মাথায় লাগাতে পারেন। বাজারে মেথির গুঁড়া পাওয়া যায়। সেটাও পানিতে ভিজিয়ে পেস্ট তৈরি করে চুলে লাগাতে যায়। যে উপায়েই লাগান না কেন, ভালো মতো শ্যাম্পু করে তা ধুয়ে ফেলুন।

 

টক দই

 

টক দই এর ব্যবহার চুলের যত্নে সেরা বলে মনে করেন অনেকে। এর কারণ হলো এর দুগ্ধজাত প্রোটিন যা চুলের গোড়া মজবুত করে। টকদই চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিয়ে আধা ঘন্টা পর হালকা গরম পানিতে তা ধুয়ে নিন। এছাড়া টকদই খাওয়াও চুলের জন্য উপকারী হবে। তাই প্রতিদিন টকদই খাওয়ার চেষ্টা করুন।

 

আরো কিছু প্রাসঙ্গিক কথা

সন্তান প্রসবের পর চুল পড়া রোধ করতে এই উপায়গুলো আপনাদের কাজে লাগবে আশা করি। তবে আরো কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল করবেন। বাচ্চা প্রসবের পর অন্তত ছয় মাস চুল নিয়ে কিছু ব্যাপার একেবারেই এভয়েড করতে হবে। যেমন টাইট করে চুল বাঁধা যাবে না এবং চুল কালার করা বা স্ট্রেইট করার চিন্তা বাদ দিতে হবে। এতে চুলের আরো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এছাড়া চুলকে সব সময় ময়েস্ট রাখতে হবে, ড্রাই হতে দেয়া যাবে না। গোসল করে চুল যেন অনেকক্ষন ভেজা না থাকে সেজন্য প্রয়োজনে ড্রায়ার ব্যবহার করতে হবে। চুল খুব বেশী পড়তে থাকলে একটা নতুন কাট নিতে পারেন, যেন চুল ম্যানেজ করা যায়। বাচ্চা নিয়ে এত বেশী যত্ন করাটাও অনেক কঠিন যেখানে নিজের জন্য কোনো সময় পাওয়া যায় না। চুল আঁচড়ানোর কাজটা বারান্দায় গিয়ে করলেই ভালো হবে তাহলে যেখানে সেখানের চুলের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবেন।

 

পরিশিষ্ট

চুল ছোট হোক আর বড়, প্রেগন্যান্সির পর চুল পড়বেই। কিছু সতর্কতা এবং একটু যত্ন আপনার চুলকে রাখতে পারে শক্ত মজবুত। কিন্তু এত যত্নআত্তি সত্ত্বেও অনেক বেশী চুল পড়তে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। হতে পারে কোনো ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ছে। সাধারণত আইরন, জিঙ্ক এসবের অভাবে এমন হয়। তবে সাধারণত বাচ্চা প্রসবের পর ডাক্তার এমনিতেই প্রয়োজনীয় ভিটামিন রিকমেন্ড করে থাকেন। অন্য কোনো সমস্যা আছে কীনা তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন, তবে আগে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখুন একবার। হতে পারে এতেই সমস্যা দূর হয়ে গেল