মুখ ও গলা যত্ন

বাচ্চার মুখ ও গলার যত্ন

 

 

বাচ্চার যত্ন প্রত্যেক মা-বাবার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বাচ্চার জন্মের পর থেকেই বাবা-মায়ের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বাচ্চা যেন সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে  পারে। তাই বাচ্চার বিভিন্ন অঙ্গের যত্নের সাথে সাথে শিশুর মুখ ও গলার যত্নও খুব প্রয়োজন।

 

ছোটবেলায় শিশুদের যথাযথ যত্নের অভাবে শিশুদের মুখে অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। শিশুদের মুখের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে ওড়াল থ্রাশ বা ফাংগাল সংক্রমণ সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। এটি ক্যানডিডা অ্যালবিকানস নামের ইস্ট বা ফাংগাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে। ওরাল থ্রাশ অনেক সময় গলা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এ ধরনের ওরাল থ্রাশকে ওরোফ্যারিনজিয়াল ক্যান্ডিডিয়াসিস বলা হয়। ওরাল থ্রাশ বা ফাংগাল সংক্রমণ চিবুকের ভেতর, জিহ্বা, তালু, ঠোঁট ও মাড়িতে দেখা যেতে পারে।

 

ওরাল থ্রাশ মায়ের জন্যও খুব চিন্তার ব্যাপার। ওড়াল থ্রাশ হলে তা বাচ্চার কাছ থেকে মায়ের স্তনে ও স্তনবৃন্তে ইস্ট সংক্রমণ করতে পারে। এতে নবজাতককে দুধ পান করানোর সময় মা ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে নবজাতকের চিকিৎসার পাশাপাশি মায়েরও চিকিৎসা নিতে হয়।

 

এসব কারণে শিশুর জন্য মা-বাবার বাড়তি যত্ন আত্তি প্রয়োজন। শিশুর যত্নে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যাপার নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

 

১। ওড়াল থ্রাশের ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাঃ

সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক,বাচ্চার ওরাল থ্রাশ হলে এবং বাচ্চা যদি এক মাসের কম বয়সী হয় নবজাতকের সাসপেনশন বা ড্রপ দিনে চারবার দিতে হয়। ৩০ দিন বয়সের বেশি নবজাতকের ক্ষেত্রে সাসপেনশন বা ড্রপ এক মিলিলিটার করে দিনে চারবার থেকে ১০ দিনের জন্য আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করা হয়। শিশুর দুধ খাওয়ানোর বোতল, খেলনাসহ যেসব সামগ্রী তার মুখের সংস্পর্শে আসতে পারে, সেগুলো সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

 

২। দাঁতের ক্ষয় রক্ষা করা

দাঁতের ক্ষয় রক্ষা করার জন্য মা-বাবার বাচ্চার প্রতি খুব সচেষ্ট লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। যেসব নবজাতক বেশি বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে এবং দুধ পান করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে, আবার একই সঙ্গে নবজাতকের মা-ও ঘুমিয়ে পড়েন, সে ক্ষেত্রে নবজাতকের দাঁতের ক্ষয় দেখা দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে মায়েদের খুব বেশি সচেতন থাকতে হবে। দুধ-দাঁত ওঠার সময় শিশু সবকিছুই কামড়াতে চেষ্টা করে, তাই সংক্রমণের আশঙ্কা সেই সময়টাতে খুব বেশি দেখা দেয়। এ সময় শিশুর মুখের যত্নে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চার দাঁতের প্রতি যত্ন নিলে দাঁত বাঁকা বা গেঁজ দাঁত ওঠার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। ফলে শিশুর মুখের অবয়ব সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে।

 

৩। টুথব্রাশের ব্যবহার

বাচ্চার দাঁতের জন্য বাচ্চার উপযোগী টুথব্রাশ পছন্দ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত নরম টুথ ব্রাশ দিয়ে যত্নের সঙ্গে শিশুর দাঁত ব্রাশ করাতে হবে। শিশুদের মাঝে প্রায়ই আঙ্গুল চোষার প্রবণতা দেখা দেয়। এ ধরনের অভ্যাস  শিশুর থাকলে শুরুতেই মোটিভেশন দিয়ে অভ্যাস পরিত্যাগ করানোর চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে চোয়ালের সমস্যা হওয়া এবং দাঁত উঁচু ও দাঁতের মধ্যে ফাঁক হতে পারে।

 

৪। সিফিলেস রোগের সমস্যা

সিফিলেস হলো এক ধরণের দুরারোগ্য ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ যা গর্ভাবস্থায় মায়ের থাকলে শিশু জন্মগতভাবে এই রোগ আক্রান্ত হতে পারে। জন্মগতভাবে সিফিলিসে আক্রান্ত শিশুর মুখে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাচ্চাকে খুবই সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা দিতে হবে।

 

৫। ঠোঁটকাটা ও তালুকাটা

বাচ্চা অনেক সময় ঠোঁটকাটা বা তালুকাটা বা বিভিন্নকরম শারীরিক ভারসাম্যহীনতায় জন্মাতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে নবজাতক দ্রুত অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, এসব জন্মগত ত্রুটির ক্ষেত্রে রিকনস্ট্রাকশন সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। যথাযথ চিকিৎসা না করালে ভবিষ্যতে শিশুর উচ্চারণ ও কথা বলায় সমস্যা হতে পারে। তালুকাটা শিশুদের জন্য স্পিচ থেরাপি ভালো ফল দেয়। অস্ত্রপচার না করা পর্যন্ত শিশুর তালুর ওপর প্রসথেটিক ডিভাইস সংযোজনেরও প্রয়োজন হতে পারে। ঠোঁটকাটা কিছু নবজাতকের ক্ষেত্রে বুকের দুধ খেতে সমস্যা হতে পারে। এইসব ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের বোতল ব্যবহার করে শিশুকে দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।

 

৬। ঋতুভেদে যত্ন

ঋতুভেদে শিশুদের যত্নের ধরণে কিছুটা পরিবর্তন আসে। যেমন গ্রীষ্মকালে হালকা ক্রিম এবং বাচ্চাদের পাডার শিশুর মুখে গলায় এবং সারা শরীরে মাখিয়ে দিতে হবে যাতে শিশু গরমে খুব বেশি অস্থির হয় না পড়ে। আবার শীতকালে মা-বাবাকে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হয়। শীতকালে বাচ্চাকে সব সময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চার মাথা খালি রাখা যাবে না। বাচ্চাদের জন্য মাঙ্কি টুপি খুব ভালো। আর গলায় সব সময় মাফলার জাতীয় কিছু জড়িয়ে রাখতে হবে। শীতকালে বাচ্চাকে সব সময় হালকা গরম পানি খাওয়াতে হবে। অন্যথায় শিশুর গলায় ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।

 

পরিশিষ্ট

বাচ্চার শরীরের বিভিন্ন অংশের জন্য মা-বাবার চা ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা। কিন্তু আধুনিক বাবা মায়ের কাছে আমাদের প্রশ্ন

 ১) শিশুর মুখ ও গলার যত্নে আমরা কি শিশুর ছোটবেলা থেকেই যথেষ্ট পরিমান সচেতন?

২) শিশুর মুখ ও গলার যত্নে প্রয়োজনীয় করণীয়গুলো কি আমরা যথাযথভাবে মেনে চলছি?

 

শিশুর মুখ ও গলার সঠিক যত্ন শিশুকে একটি সুস্থ সবল জীবন গড়ে দিতে খুবই সাহায্য করে। তাই নবজাতক শিশুর মুখ ও গলার যত্নে অভিভাবকদের সব সময় সচেতন থাকতে হয়।

আমাদের কেয়ার লাইনে ফোন করে রবি থেকে বৃহস্পতিবার (সরকারী ছুটির দিন বাদে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপারমম এর ডাক্তারদের সাথে সরাসরি পরামর্শ করতে পারেন মা ও শিশু বিষয়ক যেকোন সমস্যা নিয়ে আমাদের টোল ফ্রি নাম্বার ০৮-০০০-৮৮৮-০০০